খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ এ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। আর সবশেষ এক বছরে ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ যাবৎকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য মিলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গত বছরের একই সময়ে (সেপ্টেম্বর ২০২১) খেলাপির পরিমাণ ছিল এক লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
বিপুল অঙ্কের এ খেলাপি ঋণের মধ্যে বেশিরভাগ খেলাপিই দেশের বেসরকারি ব্যাংকের। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যত টাকার ঋণ বিতরণ করছে তার মধ্যে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও বিতরণকৃত ঋণের তুলনায় তা অনেক বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৩ শতাংশ।
এ দিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ খেলাপি। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো মোট ৩৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা বিতরণ করলেও এর মধ্যে খারাপ হয়ে পড়েছে ৪ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ একলাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা বলা হলেও এর বাইরে অবলোপন করা খেলাপি ঋণ রয়েছে আরও প্রায় অর্ধলাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া উচ্চ আদালতে রিট করে অনেক ঋণ নিয়মিত করে রাখা হয়েছে। ফলে আসলে কত টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য কোনও তথ্য নেই।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার যে সুবিধা দিয়েছে, তা গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী করে তুলেছে। এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে আরও ভয়াবহ হবে।